হুট করে একটা ট্রাক চোখে পড়ল, আমি চোখ ২টা বড় বড় করে তাকাই
থাকলাম। অতি অসাধারণ না গাড়িটা , ভাঙ্গা চোরাই মনে হল কিন্তু গাড়িটির ঠিক পিছনে
অনেক অসাধারণ একটা কথা লিখা ছিল আর সেটা দেখেই আমি চোখ ২টা বড় বড় করে তাকাই ছিলাম।
সহজ একটা কথা কিন্তু মনে খুব খটকা দিল, লিখাটা এমন ছিল “ সম্পদ খাবে আপন জনে, দেহ
খাবে পোকাই” কথা টা আগেও শুনছি আমাদের দেহটা পোকাই খাবে কিন্তু তখন এতটা মনে ধরে
নাই। মনে ধরবার আসল কারণ টা নিজের অবচেতন মনই মনে করিয়ে দিল। আমার বাবা টা অনেক
সাধারন ভাবেই জীবন যাপন করতেন যদিও তিনি প্রথম শ্রেণীর সরকারী চাকুরীজীবী ছিলেন তবে খুব
কমই দেখছি নতুন নতুন জামা পরে বাইরে যাইতে। তিনি এতটাই সাধারন জীবন যাপন করতেন যেন
আমিও আমার জীবনকে ওটাই আদর্শ বানাই ফেলছি।
নতুন জামা পরলে শরীরের মধ্যে কেমন কেমন করে।সত্যি কথা বলতে কি আমার বিশ্ববিদ্যালয়
এ থাকা ৪ টি বছর এ আমার যতদূর মনে পড়ে আমি শুধু একবারি পাঞ্জাবী গুলো স্ত্রি করে
পরে গেছি। এটার অর্থ এই না যে আমি খুব নোংরা হয়ে বাইরে বার হই। আমার পাঞ্জাবী
গুলোর বেশির ভাগই পলেসটার আর কটন এর মিক্সিং এ ছিল তাই অত বেশি কুচকাই যেত না।যাই
হোক কাজের কথাই আসি, বাবা মারা গেছেন ১০ মাস ১৫ দিন হল। সত্যি বলতে তিনি ভোগ করবার
মত কিছুই করে যান নাই। নিজের একটা শেষ ইচ্ছা ছিল সারাজীবনের সঞ্চিত টাকা দিয়ে তৈরি
করা বাড়িতে একটা দিন থাকবেন, বাড়িটা কমপ্লিট ঠিক এ হয়েছিল কিন্তু তার আর ওই বাড়িতে
ওঠা হই নাই. আমার শিক্ষা জীবন শেষ হয়েছিল না তাই বাবা আমাকে নিয়ে অনেক প্রত্যাশা
থাকা সত্ত্বেও আমি কিছু দিতে পারি নাই। বাসাতে একটা পাঠাগার হবে সেটাও হল না।
সত্যি বলতে কি আমার জানা তার কোন ইচ্ছাই পূরণ হই নাই... তিনি আমাদের মাঝে আর নেই,
রেখে গেছেন অনেক কিছু।
কোন কিছুর অভাব বুঝতে পারি না। আমাদের পরিবারের সকল এর জন্য
এমন সুযোগ করে থুয়ে গিছেন দেখে মনে হই বাবা জন্মই নিছিলেন একজন কামলা হয়ে সারাটা
জীবন কাজ করে যাবেন কোন স্বার্থ ছাড়া আর শুন্য হাতে যখন ফিরে গেলেন না ফেরার দেশে
সবাইকে এই বার্তাই যেন দিয়ে গেলেন “পর্বতসম সম্পদ থুয়ে গেলেও তোরা আমার মত শুন্য
হাতেই না ফেরার দেশেই যাবি ” । বাবা তো বাবাই, খুব মিস করি...হুট করে কোন ছবি সামনে
চলে আসলে নিজেকে খুব লুকাই যেন ছবিটা আমি দেখি নাই...আমি হাঁটতে খুব পছন্দ করি,
দিন শেষে বাড়ি যখন ফিরি বৃদ্ধ কোন মানুষ দেখলেই আনমনে তাকাই থাকি।। কাকে খুঁজি মনে
হই... সারাদিন পরিশ্রান্ত কোন বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালা কে যখন দেখি ঘাম টপ টপ করে পড়ছে,
হাফিয়ে বুকের মধ্যে ধড়ফড় ধড়ফড় করছে...শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে...। আমি অপলক
দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি আমার যদি এমনও একটা বাবা থাকতো...। আমরা সবাই মৃত্যুর
পথযাত্রী। যখন মৃত্যু নিকটবর্তী হয় তখন আল্লাহর রহমতের
আশাই অধিক হওয়া উচিত এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আগ্রহই প্রবল হওয়া উচিত। কারণ যে
ব্যক্তি আল্লাহর সাথে সাক্ষাতে আগ্রহী হয় আল্লাহও তার সাক্ষাতে আগ্রহী হন। আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের প্রত্যেকে যেন শুধু এ
অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে যে, সে আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস
: ২৮৭৭
একটা একটা করে দিন পার করছি আর আল্লাহর
সাক্ষাতের জন্য একটা একটা করে দিন এগিয়ে
চলেছে তবুও নিজেকে আমরা পারছি না প্রস্তুত করতে সেই আল্লাহর সাথে একটা
সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে।
মৃত্যুপুরী আমাদের সকলের জন্য অপেক্ষা করছে। ওই মৃত্যুপুরী
কেবল মাত্র একটা সাদা কাপড়ই সাথে নেওয়ার অনুমতি দেই। আপাত দৃষ্টিতে আমি অনেক কিছুর
মালিক হলেও আমার শেষ সম্বল এক টুকটা সাদা কাপড়ই এর থেকে বেশি কিছু না।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে মৃত্যুকে বেশি বেশি সরণ করবার তৌফীক
দান করুক।
No comments:
Post a Comment