Friday, September 29, 2017

আমার কামলা বাবা




হুট করে একটা ট্রাক চোখে পড়ল, আমি চোখ ২টা বড় বড় করে তাকাই থাকলাম। অতি অসাধারণ না গাড়িটা , ভাঙ্গা চোরাই মনে হল কিন্তু গাড়িটির ঠিক পিছনে অনেক অসাধারণ একটা কথা লিখা ছিল আর সেটা দেখেই আমি চোখ ২টা বড় বড় করে তাকাই ছিলাম। সহজ একটা কথা কিন্তু মনে খুব খটকা দিল, লিখাটা এমন ছিল “ সম্পদ খাবে আপন জনে, দেহ খাবে পোকাই” কথা টা আগেও শুনছি আমাদের দেহটা পোকাই খাবে কিন্তু তখন এতটা মনে ধরে নাই। মনে ধরবার আসল কারণ টা নিজের অবচেতন মনই মনে করিয়ে দিল। আমার বাবা টা অনেক সাধারন ভাবেই জীবন যাপন করতে যদিও তিনি প্রথম শ্রেণীর সরকারী চাকুরীজীবী ছিলেন তবে খুব কমই দেখছি নতুন নতুন জামা পরে বাইরে যাইতে। তিনি এতটাই সাধারন জীবন যাপন করতেন যেন  আমিও আমার জীবনকে ওটাই আদর্শ বানাই ফেলছি। নতুন জামা পরলে শরীরের মধ্যে কেমন কেমন করে।সত্যি কথা বলতে কি আমার বিশ্ববিদ্যালয় এ থাকা ৪ টি বছর এ আমার যতদূর মনে পড়ে আমি শুধু একবারি পাঞ্জাবী গুলো স্ত্রি করে পরে গেছি। এটার অর্থ এই না যে আমি খুব নোংরা হয়ে বাইরে বার হই। আমার পাঞ্জাবী গুলোর বেশির ভাগই পলেসটার আর কটন এর মিক্সিং এ ছিল তাই অত বেশি কুচকাই যেত না।যাই হোক কাজের কথাই আসি, বাবা মারা গেছেন ১০ মাস ১৫ দিন হল। সত্যি বলতে তিনি ভোগ করবার মত কিছুই করে যান নাই। নিজের একটা শেষ ইচ্ছা ছিল সারাজীবনের সঞ্চিত টাকা দিয়ে তৈরি করা বাড়িতে একটা দিন থাকবেন, বাড়িটা কমপ্লিট ঠিক এ হয়েছিল কিন্তু তার আর ওই বাড়িতে ওঠা হই নাই. আমার শিক্ষা জীবন শেষ হয়েছিল না তাই বাবা আমাকে নিয়ে অনেক প্রত্যাশা থাকা সত্ত্বেও আমি কিছু দিতে পারি নাই। বাসাতে একটা পাঠাগার হবে সেটাও হল না। সত্যি বলতে কি আমার জানা তার কোন ইচ্ছাই পূরণ হই নাই... তিনি আমাদের মাঝে আর নেই, রেখে গেছেন অনেক কিছু।
কোন কিছুর অভাব বুঝতে পারি না। আমাদের পরিবারের সকল এর জন্য এমন সুযোগ করে থুয়ে গিছেন দেখে মনে হই বাবা জন্মই নিছিলেন একজন কামলা হয়ে সারাটা জীবন কাজ করে যাবেন কোন স্বার্থ ছাড়া আর শুন্য হাতে যখন ফিরে গেলেন না ফেরার দেশে সবাইকে এই বার্তাই যেন দিয়ে গেলেন “পর্বতসম সম্পদ থুয়ে গেলেও তোরা আমার মত শুন্য হাতেই না ফেরার দেশেই যাবি ” । বাবা তো বাবাই, খুব মিস করি...হুট করে কোন ছবি সামনে চলে আসলে নিজেকে খুব লুকাই যেন ছবিটা আমি দেখি নাই...আমি হাঁটতে খুব পছন্দ করি, দিন শেষে বাড়ি যখন ফিরি বৃদ্ধ কোন মানুষ দেখলেই আনমনে তাকাই থাকি।। কাকে খুঁজি মনে হই... সারাদিন পরিশ্রান্ত কোন বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালা কে যখন দেখি ঘাম টপ টপ করে পড়ছে, হাফিয়ে বুকের মধ্যে ধড়ফড় ধড়ফড় করছে...শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে...। আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি আমার যদি এমনও একটা বাবা থাকতো...। আমরা সবাই মৃত্যুর পথযাত্রী। যখন মৃত্যু নিকটবর্তী হয় তখন আল্লাহর রহমতের আশাই অধিক হওয়া উচিত এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আগ্রহই প্রবল হওয়া উচিত। কারণ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে সাক্ষাতে আগ্রহী হয় আল্লাহও তার সাক্ষাতে আগ্রহী হন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের প্রত্যেকে যেন শুধু এ অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে যে, সে আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৮৭৭
একটা একটা করে দিন পার করছি আর আল্লাহর সাক্ষাতের জন্য একটা একটা করে দিন  এগিয়ে চলেছে তবুও নিজেকে আমরা  পারছি না  প্রস্তুত করতে সেই  আল্লাহর সাথে একটা সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে।
মৃত্যুপুরী আমাদের সকলের জন্য অপেক্ষা করছে। ওই মৃত্যুপুরী কেবল মাত্র একটা সাদা কাপড়ই সাথে নেওয়ার অনুমতি দেই। আপাত দৃষ্টিতে আমি অনেক কিছুর মালিক হলেও আমার শেষ সম্বল এক টুকটা সাদা কাপড়ই এর থেকে বেশি কিছু না।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে মৃত্যুকে বেশি বেশি সরণ করবার তৌফীক দান করুক।

Thursday, September 28, 2017

অতৃপ্ত গোনাহ


গোনাহ করতে করতে হাফিয়ে গিছেন, গোনাহ করতে আর ভাল লাগে না তবুও অভ্যাস এর জন্য গোনাহ না করে পারেন না। মানুষ আসলেই অভ্যাস এর দাস, মানুষ প্রতিনিয়ত যেই গোনার মধ্যে থাকে সেটা এমন ভাবে শইতান তাকে অভ্যাসের মধ্যে বেঁধে ফেলে যে, সেটা থেকে সরে আসতে পারে না মানুষ। তার পরও মাঝে মাঝে এই গোনাহ টার ওপর একটা বিতৃষ্ণা চলে আসে, মনের মধ্যে একটা অশান্তির সৃষ্টি হয়। গোনাহ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে ইচ্ছা হয়। কিন্তু সুযোগ সুবিধা না হয়ে বা কেমনে গোনাহ থেকে দূরে থাকা সম্ভব না বুঝবার কারনে একই গোনাহে আবার লিপ্ত হতে হয়। আমি অনেক বড় গোনাহর কথা বলছি না । ছোট ছোট গোনাহ মনে করে মানুষ কিন্তু যেগুলোর কারনে বড় গোনাহ এর সুত্রপাত হয়। যেমন ধরুন, রাস্তা দিয়ে সুন্দরী একটা মেয়ে যাছে, আপনি তাকে স্ক্যান করে মাথাই সেভ করে রেখে দিচ্ছেন। যদিও আপাত দৃষ্টিতে অনেক বড় কিছু মনে না হলেও ওই স্ক্যান হওয়া ছবি টাই আপনি আপনার অবচেতন মনকে দিয়ে কোন না কোন সময় ভাবাবেনই। মনে মধ্যে কত শত ভাবনার সৃষ্টি হবে, যেহেতু শইতান আপনাকে এটা ভাবাবে সুতরাং ভাল কিছু ভাবাবে না এটা ১০০% নিশ্চিত আর তখনই আপনার দিয়ে গোনাহ এর কাজ সংঘটিত হতে পারে। কি হত যদি মেয়ে টাকে না দেখতেন, আপনার তো অনুমতি ছিল না দেখবার। এই রকম কত শত গোনাহ আছে আরও কিছু উদাহরণ দেই মসজিদের সামনে দাড়িয়ে আছেন,আযান শুরু হল, তো শইতান আপনাকে বোঝাবে জামাত শুরু হতে ১৫মিনিট এখনও বাকি আছে তো এই ১৫মিনিট কি নষ্ট করবা বরং বাসাই যেয়ে একটু রেস্ট নিয়ে বাসাই নামাজ টা পড়ে নিও আমরাও সেটাই বুঝি বাসাই যেয়ে একটু রেস্ট করি এই রেস্ট ওয়াক্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আর শেষ হয় না, শইতান আমাদের ভুলিয়ে রাখে। আবার ধরুন আপনি একটা বিষয়ে কারও থেকে শুনছেন যদিও সত্য মিথ্যা জানেন না তো যতটুকু জানেন সেটা যাচাই না করেই অন্যকে বলে বেড়ান। যাই হোক , আমরা অনেক বড় গোনাহ করি বটে কিন্তু সবার চক্ষু আড়ালে, এমন কথা নাইবা লিখলাম, কিন্তু গোনাহ তো করি আমরাই... কেও না দেখুক একজন কিন্তু ঠিক এ দেখেন সব কিছু। লিখাটার কারণ এটা না মানুষকে তার গোনাহর  কথা সরণ  করিয়ে দেওয়া বরং যাদের মন গোনাহ থেকে বাচবার জন্য আকুল হয়ে আছে কিন্তু  পারছে না তাদের জন্যই লিখাটা। আপনাকে একটা খুব পরিচিত প্রতিষ্ঠান এর কথা বলবার জন্যই লিখা টা, এমন একটা প্রতিষ্ঠান যেখানে আল্লাহর লিখা বই পড়ে শোনানো হয়,যেখানে গেলে মন এমনি শান্ত হয়ে যাই। আপনি হইত গোনাহ করতে করতে হাফিয়ে গিছেন তবে জানেন কি আপনার আল্লাহ রহমত আপনার প্রতি এখনও শেষ হয় নাই এই জন্য আপনার মন টা আকুল হয়ে থাকে গোনাহ থেকে বাঁচবার জন্য। আল্লাহ আপনাকে তার ঘরে ডাকবার জন্য বলে হাইয়্যা আলাল ফালাহ্- অর্থাৎ তোমরা সাফল্যের দিকে ছুটে এসো । তবুও কি আমরা আসি বলেন ? যদি আল্লাহর সাথে সম্পর্ক করতে যাই তবে আল্লাহর ঘরে যেয়েই করতে হবে । শাইতান আপনাকে ভাল ভাল কাজে বেস্ত করে দিবে তবুও আপনি যেন কোন ভাবেই মসজিদ মুখী না হতে পারেন সে জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাবে... কেন জানেন, শইতান সব কিছু মেনে নিবে কিন্তু আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক হয়ে যাবে এটা কখনও মেনে নিবে না, আল্লাহর ঘোষণানিশ্চয় নামাজ যাবতীয় অন্যায় ওঅশ্লীল-অপকর্ম থেকে বিরত রাখে(সূরা আনকাবুত: ৪৫)। মহান আল্লাহ চান বান্দা মসজিদ মুখী হবে ,আল্লাহর সাথে সম্পর্ক করবে,এই জন্য বার বার আযান এর সময় বলা হয় হাইয়্যা আলাছ ছালাহ্ অর্থাৎ তোমরা নামাযের দিকে ছুটে এসো। কিন্তু আমরা অধম এক কান দিয়ে শুনি আর অন্য কান দিয়ে তা বার করে দেই।
 আযান শয়তানকে তাড়িয়ে দেয়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
যখন সালাতের আযান দেওয়া হয়, তখন শয়তান বাতকর্ম করতে করতে পিছু হটতে থাকে, যেন সে আযান শুনতে না পায়। যখন আযান শেষ হয় নিকটবর্তী হয়, যখন ইকামত আরম্ভ হয় সে পিছু হটে, ইকামত শেষ হলে সে আগমন করে এবং ব্যক্তি ও তার অন্তরের মাঝে বিভিন্ন কথা ও ভাবনার উদ্রেক করে, সে বলে: এটা স্মরণ কর, ওটা স্মরণ কর, ইতোপূর্বে যা কখনো তার মনে হয় নি। এক সময় এমন হয় যে, সে সালাতের রাকাত সংখ্যা ভুলে যায় (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০৮)

আযান এর যদি আল্লাহ এত বেশি ক্ষমতা দিয়ে থাকেন তবে বান্দা যদি আযান এর উত্তর দিতে দিতে মসজিদে যেয়ে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে তাহলে শাইতান না জানি কত দূরে থাকবে ওই আল্লার বান্দা থেকে। মানুষ এর পাপ করার ক্ষমতা আল্লাহ দিছেন , মানুষ তার সহজাত প্রবৃত্তির জন্যই পাপ করে ফেলে। বান্দা যখন বুঝবে আর তউবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে যাবে অবশই আল্লাহ তাকে কবুল করে নিবেন। 

Wednesday, September 27, 2017

কাছের বন্ধু



আপনার সব থেকে আপন মানুষটা আপনাকে কত টুকু বোঝে, ১০০ তে ৮০। নিশ্চয়ই তার থেকে বেশি নয়। আপনার সব থেকে আপন মানুষটি আপনাকে কত টুকু ভালবাসে। ১০০ তে ৮০। নিশ্চয়ই তার থেকে বেশি নয়।হুম সব থেকে আপন জনের মাঝেও তাহলে অপূর্ণতা আছে। আর এই অপূর্ণতা এমনি অপূর্ণতা যেটা অপূরণীয়। আমরা এই প্রত্যাশাটা সবাই করে থাকি আমাদের সব থেকে আপন মানুষ গুলোর কাছ থেকে আমাদের ১০০ তে ১০০ বুঝবে বা ভালবাসবে। আপন মানুষ মানে শুধু মাত্র স্বামী-স্ত্রী,বাবা-মা এমন সম্পর্ক না । কখনও কখনও দুরের কেও আপন এর থেকেও বেশি কিছু হয়ে যাই, আমাদের জীবনে বন্ধুত্তের সম্পর্কটা অনেক অদ্ভুত। এরা কখনও কখনও হয়ে ওঠে আপন এর থেকেও আপন কখনও বা মহাশত্রু। যাই হোক আমি ভালোর পক্ষে, বন্দু আমার আপন জন। অনেক আপন, মা বাবাকে না বলা কথাও বন্ধুকে বলা হয়ে যাই। এমন কি কোন বন্ধু আছে যে কিনা আমার সব কিছু বুঝে নিবে, কিছু বলাও লাগবে না... অসম্ভব। কিন্তু সম্ভব এমন একজন বন্ধু আছেন যিনি তার নিজ কে পরিচয় দেন আল খাবিরু নামে অর্থাৎ তিনি আপনার মনের গোপন সব খবর জেনে রেখেছেন। তিনি তার নিজ কে পরিচয় দেন আল ওয়াদুদু নামে অর্থাৎ প্রেমময়ী, তিনি এমনি প্রেমময়ী যদি আপনি সম্পর্ক করতে পারেন, আপনার সব কিছু তে পূর্ণ করে দিবেন।তিনি তার নিজ কে পরিচয় দেন আল বাররু নামে অর্থাৎ পরম বন্ধু। আপনার সকল বিপদে আপদে আপনার সাথে থাকবেন, একটা মুহূর্তেও আপনার থেকে দূরে সরে যাবে না । আল্লাহ ছাড়া আর কে এমন বন্ধু হতে পারে বলুন, আপনি যেন ওই পরম বন্ধু কে আপনার সাথে সম্পর্ক করে নিতে পারেন এই জন্য তিনি সহজ করে দিছেন সব কিছু ।তিনি তার গুণবাচক নামের মাধ্যমে পরিচয় করিয়ে দিছেন নিজেকে। আমরা জানি বুঝি তবুও ১০০ থেকে ১০০ প্রত্যাশা করি আমাদের কাছের কিছু মানুষ থেকে যারা কিনা আমাদের কখনই ১০০ তে ১০০ দিতে পারবে না...অথছ যিনি ১০০ তে ১০০ দেওয়ার জন্য অপেক্ষাই আছেন আমরা তাকেই দূরে সরিয়ে রাখছি... আল্লাহ আমাদের সবাইকে তোমার সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার তৌফীক দান কর। আমীন।

Blog Stats